সেই জটলার ফোকর দিয়ে চোখ দিতেই দেখা গেল নির্মম দৃশ্যটা। প্রায় ২০টি সাদা পলিব্যাগের প্রতিটিতে রাখা ২০০-৩০০ গ্রাম টুকরো মাংস। পাশে প্রমাণ হিসেবে রাখা শিয়ালের মাথা ও মাংসবিহীন লেজঅব্দি চামড়া। নিথর শরীরহীন প্রাণীটির চোখগুলো তখনও খোলা ! যেন সমস্ত আলস্য নিয়ে বসে আছে।
এই মাংসগুলো শিয়ালের তা আঁচ করতে পারার পরও নিশ্চিত হতে দুই বিক্রেতাকে কিসের মাংস জিজ্ঞাস করতেই তাদের স্পষ্ট জবাব-‘কিসের আবার, শিয়ালের।’
এসময় ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে দুই বিক্রেতা নিজেদের বানানো শিয়ালের মাংসের নানা উপকারিতার কথা উল্লেখ করছিলেন।
তারা বলছিলেন, বাত-ব্যথা রোগ কিংবা কঠিন রোগের প্রতিষেধক হিসেবে শিয়ালের মাংস রান্না করে খাওয়ার বিকল্প নেই। এসব ক্ষেত্রে শিয়ালের মাংসই অব্যর্থ ওষুধ। তাদের সেই কথায় গলে গিয়ে কাউকে কাউকে শিয়ালের মাংস কিনতেও দেখা গেছে।
বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন লঙ্ঘন করে শিয়াল নিধন ও প্রকাশ্যে জনাকীর্ণ এলাকায় এভাবে মাংস বিক্রি করলেও ওই দুই বিক্রেতা থেকে গেছেন অধরা।
নাম জানতে চাইলে বলতে অনীহা প্রকাশ করেন ত্রিশোর্ধ্ব দুই বিক্রেতা।
তবে তারা জানান, শুক্রবার দিনগত রাতে লালখানবাজারের মতিঝর্ণা এলাকার পাহাড় থেকে ফাঁদ পেতে এই শিয়াল ধরেন। পরে সকালে চামড়া ছাড়িয়ে মাংসগুলো নিয়ে আসেন বিক্রির জন্য। প্রতি পলিব্যাগ মাংসের দাম হাঁকাচ্ছেন ২০০ টাকা। চাহিদা থাকায় তারা প্রায়সময় শিয়াল ধরে মাংস বিক্রি করেন বলে জানান।
সেখানে উপস্থিত কেউ কেউ শিয়াল নিধন ‘বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন লঙ্ঘন’ বলে তাদের স্মরণ করিয়ে দিলেও তারা থাকেন নিরুত্তর। যেনো কোনো অপরাধই করেননি এমন ভাব।
এই দুই যুবক তাদের বাসা কোথায় সেটিও বলতে চাননি। তবে স্থানীয় একটি দোকানে কাজ করে এমন একজন যুবক তাদের চিনেছেন। তিনি তাদের নাম বলতে না পারলেও এরা মতিঝর্ণা এলাকায় থাকেন বলে নিশ্চিত করেন।
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগ) মো. জগলুল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘বন্য প্রাণী ধরা, বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এভাবে শিয়ালের মাংস বিক্রি বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনের লঙ্ঘন। আমরা তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।’
No comments:
Post a Comment