NewsBar24-Tips-news For You

বিভিন্ন স্বাস্থ্য বিষয়ক , ফানি ভিডিও , ভাইরাল সংবাদ , বিনদন সংবাদ এবং অন্যান্য বিষয়ক টিপস এবং বিজ্ঞান এর সংবাদ দেয়া হবে শুধু আপনাদের জন্য। আশা করি আপনারা উপকৃত হবেন

Friday, October 27, 2017

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের নানান বৈচিত্র্যময় পাগড়ির খোঁজে

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের নানান বৈচিত্র্যময় পাগড়ির খোঁজে





‘পাগড়ি’ শব্দটি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটু সেকেলেই বলা চলে। কিন্তু ইতিহাসের বইয়ের পাতায় আর বিয়ে বাড়িতে বরের মাথায় পাগড়ির শোভা এখনও কোন অংশে মলিন নয়। সে প্রেক্ষিতে এই পাগড়ির ছবি আমাদের সকলের চোখেই মূর্তিমান। সে কাবুলিওয়ালা হোক আর কোন দেশের রাজাই হোক, পাগড়ির বাহ্যিক জৌলুস কোন অংশেই কম নয়। দেশ বা অঞ্চলভেদে পাগড়ি বাঁধার নিয়ম-কানুন আলাদা, ভিন্ন তার কাপড়ের বুনন, রঙের বৈচিত্রতাও অপার সেখানে।
বিভিন্ন অঞ্চলের পাগড়ি
বিভিন্ন সিনেমাতে নায়কদের মাথায় পাগড়ির শোভাবর্ধনকারক চিত্র
আভিধানিক অর্থের দিকে লক্ষ্য করলে মনে হবে এ তো মাথায় এক ফালি কাপড় জড়ানো ছাড়া অন্যকিছু নয়। কিন্তু তা বললে চলবে কেন? এর পেছনের ইতিহাস এত মলিন নয়। সেই প্রাচীনকাল থেকে পাগড়ি ব্যবহারের হদিস মেলে। মরুভূমি অঞ্চলে সূর্যের তাপ থেকে রক্ষা পেতে আরব অঞ্চলে পাগড়ির ব্যবহার শুরু হয়। আঁকা সংস্কৃতির বদৌলতে আপাতপক্ষে এমন মনেই হতে পারে যে পাগড়ি শুধু শিখ বা পাঞ্জাবিদের মধ্যেই প্রচলিত। তা কিন্তু নয়। প্রায় প্রতিটি ধর্ম ও সংস্কৃতির অনুগামী ব্যক্তিদের মধ্যে পাগড়ির ব্যবহার রয়েছে। প্রাচীন ব্যাবিলন সভ্যতার আমলে ব্যাবিলনীয়রা যেমন পাগড়ি ব্যবহার করতেন, তেমনি খ্রিস্টধর্ম, ইসলাম এবং হিন্দুধর্মের মানুষদের মধ্যেও পাগড়ির ব্যাপক ব্যবহার দর্শনীয়।
মরুভূমি অঞ্চলের মানুষ পাগড়ির একটা অংশ দিয়ে মুখমন্ডল ঢেকে রাখেন
মরুভূমি অঞ্চলের মানুষ পাগড়ির একটা অংশ দিয়ে মুখমন্ডল ঢেকে রাখেন
মুসলমানদের পাগড়ির সঙ্গে একটি ঐতিহ্যগত সম্পর্ক রয়েছে। আরব দেশে জাতীয় পোশাকের অপরিহার্য অংশ এই পাগড়ি। পরে তা অন্যান্য মুসলিম দেশে ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় প্রত্যেক মুসলিম শাসকই পাগড়ি পরতেন, পরবর্তী সময় মুসলিম সামরিক কর্মচারী এবং বেসামরিক লোকজনও পাগড়ি পরতে শুরু করেন।
সৌদিআরব ও মিডিল ইষ্টের পাগড়ী
সৌদিআরব ও মধ্য প্রাচ্যের পাগড়ি
প্রাচীনকালে আইন-আদালত যখন চালু হয়নি কিংবা পুলিশ-প্রশাসন বলতে তেমন কিছু ছিল না তখন শত্রু বা অপরাধীদের ধরে আনার জন্য এই পাগড়ি ব্যবহার করা হত। রাজস্থানের অধিকাংশ লোকেরা পাগড়িকে একটি ছোট স্টোর হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। রাজস্থানীরা তাদের বিশেষ ‘গাভারিয়া’ পাগড়ির ভিতর আয়না, চিরুনি, তামাক প্রভৃতি অনেক ছোটখাটো জিনিস রেখে ঘোরাফেরা করেন।
পাগড়ির আকার আয়তনের দিক থেকে তুরস্কের নাম প্রথমে চলে আসে। একসময় তুরস্কের সম্রাটদের পাগড়ি বিশাল আকারের জন্য বিখ্যাত ছিল। উচ্চ পদস্থ ও অভিজাত সম্প্রদায়ের ব্যক্তিরা বিশাল গম্বুজ আকৃতির পাগড়ি ব্যবহার করতেন। এসব পাগড়ি সাধারণত পাতলা বেতের তৈরি গোলাকৃতির কাঠামোর হত, ভিতরটা থাকত ফাঁকা। আর কাঠামোর উপর দামী কাপড় জড়িয়ে শিল্প সমৃদ্ধভাবে তৈরি হত এই পাগড়ি। এই পাগড়ির শীর্ষদেশটির নাম ‘সারিক’।
তুর্কি অটোম্যান সুলতান সুলেমান বিখ্যাত ছিলেন তার বিশালাকার পাগড়ির জন্য। সুলতানের পাগড়িটি দেখতে ছিল অনেকটা কুমড়ো সদৃশ। প্রায় ৪-৫ ফুট উঁচু ছিল এই পাগড়ি। দূর থেকে দেখলে মনে হত একটি বিশাল হাড়ি মাথার উপরে চাপানো রয়েছে। ষোড়শ শতাব্দীতে তুরস্কের সুলতান যুবরাজ সালিম প্রায় ৩৯ ফুট দামী মখমলের কাপড় দিয়ে তৈরি পাগড়ি ব্যবহার করতেন।
ওটোম্যান সুলতানদের পাগড়ি
অটোম্যান সুলতানদের পাগড়ি
মোঘল সাম্রাজ্যে পাগড়ির কদর বিশেষভাবে লক্ষনীয়। মোঘল সম্রাট বাবর যখন আগ্রা দখল করেন তখন সেই রাজ্যের রাজাকে নিঃশর্ত মুক্তি প্রদানের জন্য এক মহামূল্যবান হিরে উপহার পান। বাবর সেই হিরে পাগড়ির শীর্ষদেশে ধারন করতেন যা তাকে আরও বেশি মহিমান্বিত করে রাখতো।
পরবর্তীতে মোঘল সম্রাট শাহ রঙ্গিলা (১৭১৯-১৭৪৮) অত্যন্ত মহার্ঘ ‘কোহিনুর’ হিরাটিকে তার পাগড়ির সামনের দিকে লাগিয়ে রাখতেন। তারও পরবর্তী সময়ে নাদির শাহ কৌশলে ‘পাগড়ির বিনিময় সৌহার্দের প্রতীক’ এই ছলে পাগড়ি বিনিময় করেন এবং কোহিনুরটি হস্তগত করেন।
সম্রাট নাদির শাহ
তুখোড় সম্রাট নাদির শাহ
খ্রিস্টান এবং ইহুদীদের মধ্যেও পাগড়ি ব্যবহারের প্রচলন ছিল। হারুন-উর রশীদের সময় খ্রীস্টানদের পাগড়ি ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়। তবে শর্ত ছিল যে, তারা শুধু হলুদ রঙের পাগড়ি ব্যবহার করতে পারবেন। কোনভাবেই সাদা বা অন্যকোনো রঙের পাগড়ি ব্যবহার করতে পারবেন না। অন্যদিকে ফাতেমীয় বংশের খলিফা হাকিম খ্রীস্টানদের কালো রঙের পাগড়ি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিলেন।
রাজস্থানের লোকদের মধ্যে আবার নানা ধরনের পাগড়ির প্রচলন রয়েছে। ১২ মাইল অন্তর অন্তর এসব এলাকার মানুষের পাগড়ির স্টাইল পরিবর্তিত হয়। এমনকি ঋতুভেদে পাগড়ির রঙও পরিবর্তিত হয়। এসব পাগড়ির নামও যেমন অদ্ভূত, তেমনি এগুলোর তৈরি এবং ব্যবহারেও বৈচিত্র্যময়তা বেশ লক্ষণীয়।
রাজস্থানের অধিবাসীদের ব্যবহৃত রঙবেরঙের পাগড়ি
রাজস্থানের অধিবাসীদের ব্যবহৃত রঙবেরঙের পাগড়ি
বসন্তকালে রাজস্থানীরা সাদা ও লালরঙের পাগড়ি পরেন যাকে বলা হয় ‘ফাল্গুনিয়া’ আর বর্ষাকালে তারা পরেন রঙিন ঢেউ খেলানো পাগড়ি। এই পাগড়িকে বলা হয় ‘লহরিয়া’। রাজস্থানীরা শুভ ও আনন্দময় অনুষ্ঠানে রঙিন, দামি সিল্কের কাপড় দিয়ে তৈরি সৌন্দর্যমন্ডিত পাগড়ি পরিধারণ করে থাকেন। তারা অনেক সময় এধরনের পাগড়িতে রঙিন চুনরি ব্যবহার করেন। তবে, দু:খ বা শোকের অনুষ্ঠানে সাদা-কালো রঙের পাগড়ি পরাই এসব এলাকার রীতি।
দেবতাকে সন্তুষ্ট করার জন্য এ স্থানের লোকদের মধ্যে ‘দেশান্তরী’ নামের পাগড়ি পরিধানের প্রচলন রয়েছে। রাজস্থানের লোকেরা সাধারণ যে পাগড়ি পরেন তা ৮০ ফুট লম্বা এবং ৮ ইঞ্চি চওড়া কাপড় দিয়ে তৈরি হয়। ‘সাফা’ নামের একরকম পাগড়ি এসব এলাকার মানুষ ব্যবহার করে থাকেন যা ৩৫ ফুট লম্বা ও ৩ ফুট চওড়া কাপড় দিয়ে তৈরি। ‘বলধিয়াভাট পাগড়ি’ নামক রাজস্থানের লোকেরা ধাতুর তৈরি এক ধরণের পাগড়ি পরিধান করেন। এটি একটি হেলমেটের মতন বস্তুর উপর বাঁধা হয়।
বলধিয়াভাট পাগড়ি
বলধিয়াভাট পাগড়ি
শিখদের মধ্যে পাগড়ি পরাটা দায়িত্ববোধের পরিচায়ক। শিখ সম্প্রদায়ের মধ্যে ‘শিখ পাগড়ি’ বা ‘দাসতার’ পরা বাধ্যতামূলক।
ভারত সহ পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে পাগড়ি বাঁধার ধরন ও ব্যবহার ভিন্নরকম। শুনলে আশ্চর্য হতে পারেন এই জেনে, পাগড়ির কাপড়, তার বাঁধার ধরন দেখে বোঝা যায় সেই ব্যক্তি কোন অঞ্চলে বাস করেন, তার পেশা বা সে কোন সমাজের প্রতিনিধি।
শিখ সম্প্রদায়ের পাগড়ি পরিধানের স্টাইল
শিখ সম্প্রদায়ের পাগড়ি পরিধানের স্টাইল
পাগড়ি বাঁধার বিষয়ে যোধপুরবাসীদের জুড়ি মেলা ভার। এটা যে একটা শিল্প তা এখানে এলে আপনি বুঝতে পারবেন। পাগড়ি বেঁধে দেয়ার জন্য যোধপুরে রয়েছে অনেক পাগড়ি বিশেষজ্ঞ যাদের বলা হয় ‘পাগড়ি ব্যান্ড’। জনশ্রুতি রয়েছে, এই বিশেষজ্ঞদের পূর্বসূরীরা কোন এক সময় এই এলাকার রাজ পরিবারের সদস্য ছিলেন।
রাজস্থানে পাগড়ি বাঁধা উপলক্ষে প্রতিবছর এক  বড় ধরনের উৎসবের আয়োজন করা হয়। এই উৎসবকে বলা হয় ‘পুষ্কর উৎসব’। এই জনপ্রিয় উৎসবে বিভিন্ন স্থান থেকে পাগড়ি বাঁধায় দক্ষ এমন প্রতিযোগীরা অংশগ্রহণ করে।
পুস্কর উৎসবে পাগড়ি বাঁধা প্রতিযোগিতা
পুস্কর উৎসবে পাগড়ি বাঁধা প্রতিযোগিতা
উত্তর ভারতের রাজ্যগুলিতেও পাগড়ি বাঁধার এক জনপ্রিয় অনুষ্ঠানের প্রচলন রয়েছে। সেই উৎসবটির নাম ‘রসম পাগড়ি’। মহীশূরের মানুষ যে পাগড়ি পরেন, সেই পাগড়ির নাম ‘মাইশোর পেতা’।
বিশ্বে বড় আকারের পাগড়ির প্রচলন রয়েছে মূলত ভারতীয়দের মধ্যে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় পাগড়ির রেকর্ডটাও তাই তাদেরই ঘরে। পাগড়িটি তৈরিতে ৪০০ মিটার (১৩০০ ফুট) দৈর্ঘ্যের কাপড় ব্যবহার করা হয়েছিল এবং ওজন ৩৫ ছিল কিলোগ্রাম। ভারতের উদয়পুরে ‘Bagore Ki Haveli’ মিউজিয়ামে এটি সংরক্ষিত আছে।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় আকারের পাগড়ী
বিশ্বের সবচেয়ে বড় আকারের পাগড়ী
পাগড়ি অনেক গুনী ও বিখ্যাত ব্যক্তিদের বিশেষত্ব হয়ে আছে। এখন এক প্রবাদ পুরুষের কথা বলব যার বাহ্যিক অবয়বে পাগড়ির এক বিশেষ স্থান আছে আর তিনি হলেন স্বামী বিবেকানন্দ। এই নামটি শুনলেই চোখের সামনে ভেসে উঠে গেরুয়া পরিহিত, মাথায় পাগড়ি দেয়া আত্মবিশ্বাসী এক দৃঢ় পুরুষ যার কণ্ঠে উচ্চারিত হয় মানবধর্মের কথা।
স্বামী বিবেকানন্দ
স্বামী বিবেকানন্দ
এভাবেই সারা পৃথিবীতে হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ বিভিন্ন প্রয়োজনে, ধর্মীয় বাধ্যবাধকতায়, আবার নিজেদের সামাজিক মযার্দা প্রকাশ করার জন্য  পাগড়ি ব্যবহার করে আসছেন। আর এভাবেই সংস্কৃতির অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই পাগড়ি।
তথ্যসূত্র
https://www.dailyjanakantha.com/details/article/100277/পাগড়ি
https://en.wikipedia.org/wiki/Turban
11 Things You Wanted to Know About My Turban But Were Too Afraid to Ask
https://en.wikipedia.org/wiki/Dastar http://www.wisegeek.com/what-is-a-turban.htm http://www.sepiamutiny.com/sepia/archives/003021.html শুকতারা পত্রিকা

No comments:

Post a Comment

>