নতুন ফটোগ্রাফারদের যে আটটি বিষয়ে মনোযোগী হওয়া উচিত
__________________________________________________________________________
ফটোগ্রাফি ব্যাপারটি পুরোপুরি নির্ভর করে একজন ফটোগ্রাফারের সৃজনশীল চিন্তা, যা আছে তা ব্যবহার করে নিজের পছন্দের সময়টিকে ধরে রাখার উপর। পোর্ট্রেট কিংবা ল্যান্ডস্কেপ, ডকুমেন্টারি কিংবা ক্যান্ডিড, আর্কিটেকচারাল কিংবা কনসেপচুয়াল ফটোগ্রাফি- আপনি যে ব্যাপারেই আগ্রহী হন না কেন, শুধুমাত্র ভালো কিংবা দামী ক্যামেরার কল্যাণে অসাধারণ ছবি তোলা আপনার পক্ষে সম্ভব নয়, যদি না একেবারে সাধারণ বিষয়গুলোর প্রতি মনোযোগী না হোন।
অর্থাৎ পুরো ব্যাপারটি নির্ভর করছে আপনার সৃজনশীলতা, সঠিক জায়গায় সঠিক সাজসজ্জা ব্যবহারের মাধ্যমে ঠিক ছবিটি তুলে আনার উপর। আপনি আপনার মোবাইল ফোন, পয়েন্ট এন্ড স্যুট ক্যামেরা কিংবা সাধারণ ডিএসএলআর বা মিররলেস ব্যবহার করেও সেটি খুব সহজে তুলে আনতে পারেন। আজ ফটোগ্রাফির সাধারণ এবং নন-টেকনিকাল কিছু ব্যাপার নিয়ে আলোচনা করা হবে, যেগুলো আপনাকে অসাধারণ সব ছবি তুলতে সাহায্য করবে।
১. ক্যামেরার লেন্স পরিস্কার রাখুন, খেয়াল রাখুন ব্যাটারিতে যেন চার্জ থাকে
সবচাইতে প্রয়োজনীয় দুটি কাজ, কিন্তু এগুলোর ব্যাপারেই যেন আমাদের সবচেয়ে বেশি অসাবধানতা কাজ করে। অপরিস্কার লেন্সের কারণে আপনার তোলা ভালো ছবিটিও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। জীবনে দেখা সবচেয়ে ভালো মুহূর্তটি ফ্রেমে বন্দি করতে গিয়ে যদি দেখেন ব্যাটারিতে চার্জ নেই, তাহলে নিশ্চয়ই আফসোসের সীমা থাকবে না!
তাই নরম ফেব্রিক কাপড় সাথে রাখুন, ময়লা হওয়ার সাথে সাথেই যেন লেন্সটিকে পরিস্কার করে ফেলা যায়। আর হ্যাঁ, অবশ্যই খেয়াল রাখুন, ময়লা পরিস্কার করতে গিয়ে যেন লেন্সে কঠিন দাগ না পড়ে। ঘর থেকে বের হওয়ার আগে ব্যাটারিতে চার্জ দিয়ে নিন। আউটডোরে দূরে কোথাও যাওয়ার থাকলে অতিরিক্ত একটি ফুল-চার্জড ব্যাটারি সঙ্গে রাখুন।
২. আলোয় ফটোগ্রাফি
গোটা লেখার মাত্র একটি জিনিস মনে রাখার সক্ষমতা যদি আপনার থাকে, তাহলে কেবল এটিই মনে রাখুন। কেননা যেকোনো ফটোগ্রাফের জন্য ক্যামেরার সাথে সাথে সমানভাবে আলোরও প্রয়োজন।
সাধারণভাবে, সূর্য থেকে প্রাপ্ত আলোই ফটোগ্রাফির জন্য সর্বোত্তম। তবে আপনি যদি ফটোশ্যুটের জন্য আবদ্ধ জায়গা বাছাই করেন, তাহলে চেষ্টা করুন দরজা-জানালা খুলে রেখে পর্যাপ্ত আলো ভেতরে প্রবেশ করাতে। প্রয়োজনে সাবজেক্টকে পর্যাপ্ত আলো যেখানে আছে, সেখানে নিয়ে রাখুন। আলোর জন্য যদি পুরোপুরি বৈদ্যুতিক বাতির উপর নির্ভর করতে হয়, তাহলে নিশ্চিত করুন যেন আপনার সাবজেক্ট পর্যাপ্ত আলো পায়। প্রয়োজনে বাতিগুলোকে নিজের মতো সাজিয়ে নিন। যদি তা না পারা যায়, তাহলে আগে দেখুন উপরে কিংবা দেয়ালে লাগানো বাতিটি কোন জায়গায় আলো ফেলছে এবং সে অনুযায়ী আপনার সাবজেক্টকে রেখে নির্দিষ্ট ফটোগ্রাফটি ক্যামেরায় আবদ্ধ করার চেষ্টা করুন। আপনি চাইলে আলো নিয়ে বিভিন্ন ধরনের খেলাও খেলতে পারেন।
৩. রিফ্লেক্টর ব্যবহার করুন
ফটোগ্রাফিতে আলোর প্রয়োজনীয়তা একটু আগেই বললাম। কিন্তু সেই আলো নিজের ইচ্ছেমতো ব্যবহার করা, আলোকে নিয়ে খেলা করার ব্যাপারটি যখন আসে, তখন রিফ্লেক্টর নিয়ে কথা বলতেই হয়। সাধারণভাবে, রিফ্লেক্টর হচ্ছে এক ধরনের সাদা কাগজ বা ফোমকোর, যার মাধ্যমে সূর্য কিংবা বৈদ্যুতিক বাতি থেকে আলো বাউন্স করিয়ে অবজেক্টের উপর ফেলা হয়। পোর্টেট কিংবা অন্যান্য স্টিল ছবিতে সব অ্যাঙ্গেলে সমান আলোর ব্যবস্থা করা, ফ্রেমে ড্রামাটিক পরিবেশ সৃষ্টি করা, শ্যাডো নিয়ে কাজ করা সহ অনেক কাজেই রিফ্লেক্টর ব্যবহার হয়ে থাকে। উদাহরণ হিসেবে নিচের দুটি দেখুন।
প্রথম ছবিটিতে লোকটির চেহারার বাম পাশ প্রায় অন্ধকারে ঢেকে আছে। এই সমস্যার সমাধানের জন্য ফটোগ্রাফার রিফ্লেক্টরের মাধ্যমে দ্বিতীয় ছবিটিতে এই সমস্যা দূর করেছেন। আর রিফ্লেক্টর ব্যবহারের আহামরি কোনো নিয়ম নেই বললেই চলে। আপনার যে অ্যাঙ্গেলে প্রয়োজন, সেই অ্যাঙ্গেলেই প্রধান সোর্স থেকে সাবজেক্টের উপর আলো ফেলতে পারেন।
৪. ছবি তোলার আগে ভাবুন
একজন ফটোগ্রাফার তার নিজের চোখে দেখা বিশ্বকে ক্যামেরায় ধারণ করে এবং তার ফটোগ্রাফের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট বিষয়কে নিজের স্বতন্ত্র চিন্তাধারায় ফুটিয়ে তুলে সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেয়। তাই প্রত্যেকটি ছবি তোলার আগে, কী তোলা হচ্ছে সে দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত। শাটার চাপার পরে কী ধরনের ছবি ক্যামেরায় ধারণ হতে পারে, সেটি আগে থেকেই মনে মনে চিন্তা করে রাখা প্রয়োজন। কেননা, ক্যামেরা শুধু আপনাকে কোনো দৃশ্যকে ধারণ করতে সাহায্য করবে, কিন্তু কী ধারণ করবেন, সে ব্যাপারে আপনাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
৫. ফ্রেমে কী থাকবে, কী থাকবে না, তা আগে বিবেচনা করুন
আপনি যখন ক্যামেরার ভিউ-ফাইন্ডার দিয়ে প্রত্যাশিত দৃশ্যটির দিকে তাকাবেন, তখন ফ্রেমের প্রত্যেকটি স্বতন্ত্র জিনিসের ব্যাপারে মনযোগী হোন। খেয়াল করুন, ফ্রেমে এমন কিছু আছে কিনা যা পুরো ছবিটিকে নষ্ট করে দিবে। এমন সব জিনিসকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন, যা আপনার কাঙ্ক্ষিত ছবির মানেই পাল্টে দেবে। প্রয়োজনে ‘রুল অফ থার্ড’ প্রয়োগ করুন। অর্থাৎ একটি ছবিকে আনুভূমিক এবং উলম্বভাবে তিন-তিন-তিন করে নয় ঘরে ভাগ করুন। এরপর প্রত্যেকটা ঘরে থাকা জিনিসগুলোর উপর চোখ বুলান। এতে করে ফ্রেমের প্রত্যেকটা অংশে আলাদা আলাদা করে মনোযোগ দিতে এবং অপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলোকে কৌশলে পরিহার করতে সুবিধা হবে।
৬. বিভিন্ন দিক থেকে সাবজেক্টকে লক্ষ্য করুন, নিখুঁত ছবিটি নিন
আমরা ছবি তোলার সময় প্রায়ই যে ব্যাপারটি নিয়ে সবচেয়ে বেশি অবহেলা করি তা হলো, সাবজেক্টকে বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে পর্যবেক্ষণ করি না! এতে করে কাঙ্ক্ষিত ছবিটি মিস হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আপনি যদি বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে বিভিন্নভাবে কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর ছবি উঠান, তাহলে তাদের গঠন বিভিন্ন রকম দেখা যাবে। এই সুযোগটিই আপনার নেওয়া উচিত। এতে করে ভালো ছবিটি বেছে নেওয়ার জন্য একের অধিক পছন্দ থাকবে।
৭. বেশি করে ছবি তুলুন
চেষ্টা করুন একই জিনিসের দশ থেকে বিশটি ছবি উঠাতে। তবে খেয়াল রাখুন, প্রত্যেকটি ছবিই যেন স্বতন্ত্র হয়, প্রত্যেকটি ছবিতেই যেন নতুন কিছু থাকে। আপনি বিভিন্ন ধরনের আলোর ব্যবহার করে একই সাবজেক্ট নিয়ে বিভিন্ন কাজ করতে পারেন। ক্যামেরার শাটার স্পিড, আইএসও, অ্যাপার্চার বাড়িয়ে-কমিয়ে, এক্সপোজার, হ্যোয়াইট ব্যালেন্সের পরিবর্তন করে বিভিন্ন ধরনের এক্সপেরিমেন্ট করতে পারেন। একটি ছবিকে আরেকটির সাথে তুলনা করার মাধ্যমে সবচাইতে ভালো ছবিটি বাছাই করে নিতে পারেন। এতে দক্ষতা বৃদ্ধির সাথে সাথে আপনার পোর্টফোলিওতে অসংখ্য অসাধারণ ছবি জমা হবে।
৮. ছবিগুলো শেয়ার করুন
মনে রাখবেন, আপনি ছবি তুলছেন আপনার অতুলনীয়, স্বতন্ত্র দৃষ্টিভঙ্গিগুলোকে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য। তাই ছবিগুলো বিভিন্ন জনের সাথে, বিভিন্ন মাধ্যমে শেয়ার করুন। বন্ধু-বান্ধব, পরিবারের সদস্য, পেশাদার ফটোগ্রাফারদের আপনার কাজ দেখান। তাদের কাছ থেকে মন্তব্য নিন। ভালো মন্তব্যগুলো আপনার জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। আপনি যে ঠিক পথে এগুচ্ছেন, তা-ও নির্দেশ করবে। মাঝেমধ্যে বেশ সমালোচিতও হতে হবে আপনাকে, এগুলো আপনার ভুলগুলো শোধরাতে সহযোগিতা করবে।
আপনি নিশ্চয়ই জানেন, আপনার ফটোগ্রাফগুলো আপনার একান্ত নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করে। তাই এখানে বড় কোনো ভুল করার সুযোগ নেই, আপনার তোলা ছবি আপনারই পরিচায়ক।
No comments:
Post a Comment